বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে একাত্তরে গণহত্যার স্বীকৃতি চায় বাংলাদেশ

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ৯৪ বার
আপডেট : শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপারে এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা সংস্থাগুলোকে অবহিত করা সম্ভব করা যায়নি। যথাযথ উদ্যোগের অভাব রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে গণহত্যায় অংশ নেওয়া পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই দেশে-বিদেশে কাজ করছে সচেতন মহল। সম্প্রতি স্বীকৃতি আদায়ের কাজটি আরও জোরদার করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় আজ ৯ ডিসেম্বর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হবে আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম সভায় ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গণহত্যা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানো দিবসটি পালনের অংশ। জাতিসংঘ এদিন প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে গণহত্যায় উস্কানি না দেওয়া ও গণহত্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানায়।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য দিবসটি আলাদা গুরুত্বের। এ দেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি নিধন শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। বর্বর সেই অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সার্চ লাইট।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বন্দুক ও কামান নিয়ে হামলা চালানো হয়। কয়েক ঘণ্টার হামলায় কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। পরবর্তী নয় মাস এ ধরনের মানুষ হত্যা অব্যাহত ছিল। সরকারি হিসেবে  বাংলাদেশে মোট ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়। সেই রক্তাক্ত ইতিহাস বাঙালিকে প্রতি মুহূর্তে কাঁদালেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ গণহত্যা সম্পর্কে তেমন অবগত নয়।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক এবং ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এমএ হাসানের তথ্য মতে, ২০০১ সালে ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। পরে ২০০৪ সালে ২৫ মার্চকে গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। তার আবেদনের জবাবে ইউনেস্কো জানিয়েছিল, স্বীকৃতি পেতে হলে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে জাতিসংঘে তা তুলে ধরতে হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতি নিয়ে তা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাস করতে হবে। ২০০৯ সালে তিনি সরকারের কাছে তা তুলে ধরলেও সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

একই প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে  বলেন, সরকার স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টিতে বিলম¦  করেছে। ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের জন্য আমরা ২০০৭ থেকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো এবং গণহত্যার ভুক্তভোগী বিভিন্ন দেশকে চিঠি লিখেছি। আমাদের প্রথম চেষ্টাটি ব্যর্থ হয়েছে। এখন নয় মাস ধরে চলা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কাজ করছি আমরা।  তবে বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে নানা কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে। স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের কনভেনশন অন ‘দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইডে’ গণহত্যার পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ আছে।

কোনো জনগোষ্ঠীকে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য জনগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া- এই পাঁচটি উপাদানের সব ক’টি বিদ্যমান ছিল একাত্তরের গণহত্যায়। ২৫ মার্চের গণহত্যা তাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি রাখে।

এ দাবি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার অংশ হিসেবে বর্তমানে দেশে ২৫ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে জাতীয় গণহত্যা দিবস। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ দিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস করা হয়।

চলতি বছর পাকিস্তানিদের হত্যাকা-কে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জেনোসাইড ওয়াচ এবং লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সংস্থা দুটি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারকে আরও পরামর্শ দিয়ে শাহরিয়ার কবিরের বলেন, ভারত নেপাল ভুটান রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো একাত্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা করেছিল। এসব দেশের সরকারকে অনুরোধ করলে তারা তাদের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পক্ষে  প্রস্তাব পাস করবে। এমনটি আশা করা যায়। আর্মেনিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরালিওনের মতো ছোট ছোট দেশও তাদের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশকেও কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্বীকৃতি আদায়ের সুফল সম্পর্কে জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, পাকিস্তান বাহিনীর ১৯৫ জন সেনা যোদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু তাদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি। আনতে হলে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন হবে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া গেলে রাজাকার-আলবদরদের মতো পাকিস্তানের বর্বর সেনাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা যাবে।

অভিন্ন মত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির। দাবি আদায়ে নিজেদের কাজ অব্যাহত রেখেছে কমিটি। কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার উদ্যোগে ৮ ও ৯ ডিসেম্বর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে মানববন্ধন ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ পনেরোটি দেশের আইনপ্রণেতা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, মানবাধিকার ও শান্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতাকর্মীরা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি আসিফ মুনির তন্ময়, ডা. নুজহাত চৌধুরী ইতোমধ্যে ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর